আমিনুল ইসলাম: রাজধানীর পুরান ঢাকার বঙ্গবাজার সংলগ্ন আনন্দবাজার এলাকায় ৩.৯৭ একর রেলভূমি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে একটি প্রভাবশালী স্থানীয় মহল। জমি উদ্ধারের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আইনি লড়াই চালিয়ে গেলেও দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই এ জমিতে গত ৫০ বছরে একের পর এক বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করেছে অবৈধ্য দখলদারা। অধিকন্তু আশ্চার্যের বিষয় হলো সবকারি বিধি অমান্য করে এই জায়গায় অবৈধ ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের নিয়োমিত ট্রেড লাইসেন্স দিচ্ছে সিটি করপরেশন।
আর এই কাজের সঙ্গে সহযোগিতা করে ডেসকো, তিতাস, ওয়াসার কিছু অসাধু কর্মকতা কর্মচারিবৃন্দু। রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই সরকারের এতগুলো প্রতিষ্ঠানের নাকের ডগায় এই মহা অনিয়ম ও নৈরাজ চলছে কারো টনক নড়লো না এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে। শুধুমাত্র রেলবিভাগ নয়, রাজউক, সিটি কর্পোরেশন, ডেসকো, তিতাস ও ওয়াসা কেউই এর দায় এড়াতে পারে না বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় লোকজন জানায়, ১৯৬৮ সালে ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশনের কার্যক্রম কমলাপুর রেলস্টেশনে স্থানান্তরিত হওয়ার পর থেকে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল আনন্দ বাজারের জমি দখলের অপচেষ্টা চালাতে শুরু করে। ১৯৭৪ সালে মীর্জা মো. আশরাফ গং ভুয়া দলিল তৈরি করে ৩.৯৭ একর জমির মালিকানা দাবি করে।
সেই সময়ের অবৈধ দখলদারদের কেউ কেউ মারা গেলেও তাদের বংশধরেরা বর্তমানে বহিষ্কৃত সংরক্ষিত মহিলা কমিশনার রোখসানা ইসলাম চামেলীর স্বামী, ভাই, বোন ও ভগ্নীপতি জোটবদ্ধ ভাবে দখল করে রেখেছেন। খোদ রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে সরকারের মূল্যবান এই জমি দখল করে নানা অপকর্ম, চাঁদা বাজি, মাদকব্যবসা, পতিতাবৃত্তি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
অন্যদিকে প্রতিবছর সরকার শত শত কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ফুলবাড়িয়া একটি ব্যস্ততম ও ঘন বাণিজ্যিক এলাকা অথচ ৫০ বছর আগেও ছিল দেশের প্রধান রেলস্টেশন ফুলবাড়িয়া, সেই সুবাদে আনন্দবাজারে মোট ৩. ৯৭ একর জমির মালিক সরকার। নিমতলী ও পুরনো সেক্রেটারিয়েট রোডের মাঝে পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বি স্থানটি আনন্দবাজার। ২০১২ সালে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ৩.৯৭ একর জমির মধ্যে ১.১০ একর জমি আনন্দ বাজার বণিক সমিতি বা পরবর্তিতে (আনন্দবাজার রেলওয়ে সুপার মার্কেট লিমিটেডের) নামে লীজ প্রদান করে। বৈধভাবে রেলওয়ের লাইসেন্স গ্রহণ করে নির্দিষ্ট হারে খাজনা, ভ্যাট ও অফিস খরচাদি পরিশোধ করে। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ ১.১০ একর জমিও লীজগ্রহীতাদের বুঝিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়।
বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় জারি করা রেল কর্তৃপক্ষের সতর্কীকরন বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রেলের মালিকানাধীন এই জমির অংশ কারো কাছে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে বেচাকেনা, বন্দক ও হস্তান্তর বেআইনি এবং অকার্যকর। তবুও সাধারণ ব্যবসায়ীরা অবৈধ দখলদারদের কাছে প্রতারিত হয়।দেশবাসী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষন করছি যে সরকারী স্বার্থ রক্ষার্তে রাজধানীর কেন্দ্রবিন্দুতে এই বৈষম্য, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও হরিলুট দুর করতে প্রশাসন কেন নীরব, কেন এতো বিলম্ব হচ্ছে। দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের এই সন্দ্ধিক্ষনে সরকারি সম্পদ রক্ষার জন্য প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। অন্যথায় আগামী শত বছরেও আনন্দবাজার আলোর মুখ দেখবে না বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।