স্টাফ রিপোর্টার: মানহীন কোম্পানি মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেডের নিম্নমানের য়োকরাল নামক বালাইনাশক (পেস্টিসাইড) পেঁয়াজ ক্ষেতে ব্যবহার করে পথে বসতে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন এলাকার পেঁয়াজ চাষিরা। শুখসাগর পেঁয়াজ এবার দুঃখের হাতছানি দিচ্ছে তাদের। জানা গেছে, যে সকল এলাকায় মার্শালের য়োকরাল নামক বালাইনাশক (পেস্টিসাইড) প্রয়োগ করা হয়েছে সে এলাকাতে পেঁয়াজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মার্শাল এগ্রোভেটের একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তির সাথে সরাসরি যোগাযোগ বা টেলিফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হই আমরা। তবে কোম্পানির হিসাব বিভাগের ম্যানেজার মনির হোসেন দায়িত্বশীল লোকদের সাথে সাক্ষাৎ করারোর বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু পরবর্তীতে কোম্পানির পক্ষ থেকে আর কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
সূত্র মতে, চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার পর মার্শালের য়োকরাল নামক বালাইনাশক (পেস্টিসাইড) প্রয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরের নাজিরাকোনা গ্রামের নাগার মাঠসহ এলাকার প্রায় শতাধিক কৃষক। স্থানীয় সার কীটনাশক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে য়োকরাল নামক এই ছত্রাকনাশক (পেস্টিসাইড) কিনে জমির উঠতি পেঁয়াজের পচন রোধে ব্যবহার করেছিলেন কৃষকরা।
সরেজমিন, মুজিবনগরের নাজিরাকোনা গ্রামের নাগার মাঠসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় অর্ধা-শতাধিক কৃষকের পেঁয়াজ গাছ জমিতে নুয়ে পড়েছে। পেঁয়াজের কলি হলুদ হয়ে চুপসে যাচ্ছে। ডগা শুকিয়ে লুটিয়ে পড়ছে মাটিতে। পাশের জমির পেঁয়াজ গাছ বড় হয়ে গেলেও আক্রান্ত জমির পেঁয়াজ মাটির সঙ্গে নুয়ে রয়েছে। এবারের শীত মৌসুমে এমন পরিস্থিতিতে পড়েছেন মুজিবনগর উপজেলার নাজিরাকোনা, শিবপুর, ভবরপাড়া, কেদারগঞ্জ, মানিকনগর গ্রামের অর্ধ শতাধিক কৃষক।
তাদের অভিযোগ, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পরামর্শে পেঁয়াজের ছত্রাকজনিত রোগ থেকে বাঁচতে “মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেডের নিম্নমানের য়োকরাল নামক বালাইনাশক (পেস্টিসাইড) প্রয়োগের পরেই ক্ষেতের এ অবস্থা হয়েছে। অনেকেই ধারদেনা করে পিঁয়াজ আবাদ করে পড়েছেন বিপাকে। এ বছর পথে বসতে হবে তাদের।
মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার নাজিরাকোনা গ্রামের পেঁয়াজ চাষি আবুল হোসেন জানান, বর্গা নেওয়া এক বিঘা জমিতে চাষ করছেন পেঁয়াজের। জানুয়ারি মাসের শুরুর দিকে পেঁয়াজ ক্ষেত ছত্রাকজনিত রোগ থেকে বাঁচাতে স্থানীয় ব্যবসায়ীর পরামর্শে “মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেডের য়োকরাল নামক বালাইনাশক (পেস্টিসাইড) প্রয়োগ করেন। এর পর থেকেই পেঁয়াজের গাছ হলুদ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে। এমন অবস্থায় অসহায় হয়ে পড়েছেন তিনি।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে তার ৮০-৯০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। ধার দেনা করে এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছেন তিনি। পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চরম বিপদের মধ্যে আছেন। পেঁয়াজ বিক্রি করে এ বছর তার প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা হতো বলে জানান তিনি।
এ বছর নাজিরাকোনা গ্রামের আফর আলী এক বিঘা জমিতে, আব্দুল আলীমের এক বিঘা, হাফিজুল ইসলামের এক বিঘা, অ্যাডভোকেট আব্দুল আলীমের এক বিঘা, শহিদুল ইসলামের এক বিঘা, জনি মণ্ডলের ৫ বিঘা জমির পেঁয়াজের মধ্যে ২ বিঘা জমিসহ এই গ্রামের প্রায় ১৫ জন কৃষকের প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে এই ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করে সব পেঁয়াজ ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে।
এছাড়া বল্লভপুর গ্রামের পেঁয়াজ চাষি জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমিসহ এলাকার বেশ কয়েকজন চাষি পেঁয়াজ ক্ষেতে “মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেডের য়োকরাল নামক বালাইনাশক (পেস্টিসাইড) প্রয়োগের পরেই ক্ষেতের এই অবস্থা হয়েছে।
নাজিরাকোনা গ্রামের আবুল হোসেন এবং হাফিজুল ইসলামই শুধু নন, এই উপজেলার কয়েকটি গ্রামের আরও অর্ধশতাধিক কৃষক একই পরিস্থিতিতে পড়েছেন। য়োকরাল নামের কীটনাশকটি ব্যবহার করার দুই-তিন দিন পর থেকেই পেঁয়াজের গাছগুলো শুকিয়ে যাওয়া শুরু করে। শেকড়ে পচন ধরে সব শেষ হয়ে গেছে। ধারদেনা করে আবাদ করা জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এসব কৃষক। এখন ওই কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ চান ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা।
কৃষকদের অনেকেই স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ। তারা বলেন, কৃষি কর্মকর্তারা যদি মাঠে আসতেন, পরামর্শ দিতেন, তাহলে এ অবস্থা হতো না। মুজিবনগর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ওয়েব-সাইডে দেওয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মো.আব্দুল মোমিন এর নাম্বারে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
“মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেডের টেরিটরি অফিসার জানান, এখন পর্যন্ত আমার কাছে এলাকার ২০ জন কৃষক তাদের ৩৩ বিঘা জমির পেঁয়াজ ক্ষেত নষ্ট হয়েছে বলে অভিযোগ দিয়েছেন। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালে কোম্পানির প্রধান কার্যালয় থেকে কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত পেঁয়াজ চাষিদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং পেঁয়াজের স্যাম্পল পরীক্ষার জন্য নিয়ে গেছেন।
কৃষি কর্মকর্তা ডিডি বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, বিষয়টি আমাদের নথি ভুক্ত করা হয়েছে। এলাকার পেঁয়াজ চাষিদের প্রায় দেড় থেকে দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা জানি, কৃষকের ক্ষতি হলে ফোনটা আমাদের কাছে আসবে। আমাদের সব ডকুমেন্ট ও জরিপ আছে,ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেডের পক্ষ থেকে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও বিষয়টি আমার জানা নেই। এদিকে কীটনাশক কোম্পানির নাজিরাকোনা গ্রামের সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী আব্দুল জুব্বার জানান, “মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেডের য়োকরাল ব্যবহারের পর সব জায়গা থেকে এ রকম অভিযোগ আসছে ।