স্টাফ রিপোর্টার: মার্শাল এগ্রোভেটের ছত্রাকনাশক স্প্রে য়োকরাল ব্যাবহার করে প্রায় ৩০ বিঘা জমির পেয়াজ পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের একাধিক কৃষকের। এর ফলে কৃষকদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সেই সাথে নষ্ট হয়েছে নতুন ফসলের স্বপ্ন। এমন তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, পেঁয়াজ চাষ করে বিঘা প্রতি ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা খরচ করে ১৬০ মন করে ফলন পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখানে দেখা গেছে তার বিপরীত চিত্র। বিভিন্ন এনজিও ও মহাজন দের কাছ থেকে দাদন নিয়ে পেঁয়াজ চাষ করে এখন তাদের পথের ফকির হবার অবস্থা । তারা আরো জানান, ছেলেমেয়ে নিয়ে দিশেহারা অবস্থায় রয়েছেন। অনেক কৃষক তার শখের গরু বিক্রি করে অধিক লাভের আশায় পেঁয়াজ চাষ করে ছিলেন। এখন সে আশায় গুড়ে বালি।
জাহাজপোতা গ্রামের একজন পেঁয়াজ চাষী জানান, আমি আড়াই লাখ টাকার গরু বিক্রি করে পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম, আমার যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হওয়ার নয়। আমার ৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সাড়ে তিন বিঘা পেঁয়াজের জমিতে মার্শাল কোম্পানীর য়োকরাল কীটনাশক প্রয়োগ করেছিলাম।
হুদাপাড়া গ্রামের য়োকরাল ছত্রাকনাশক বিক্রেতা ইমরান আলী বলেন, আমার কাছ থেকে দুইজন চাষী য়োকরাল বিষ কিনেছেন। তাতে ক্ষতি হতে হয়েছে কি না বলতে পারবোনা, তবে কোন কোন কৃষকের ক্ষতি হয়েছে এটা আগের য়োকরালেও হতে পারে। কোম্পানির লোকজন মাঠে গিয়েছে। ডেমো করে তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার তালিকা করেছে এবং তারা ক্ষতিপূরণ পাবে বলে আমি শুনেছি।
দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, আমরা শুনেছি এবং সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্ত মাঠ পরিদর্শন করেছি,ঘটনার সাথে জড়িত কীটনাশক কোম্পানির লোকজন ও সরেজমিনে মাঠ পরিদর্শন করেছে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মার্শাল এগ্রোভেটের একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তির সাথে সরাসরি যোগাযোগ বা টেলিফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হই আমরা। তবে কোম্পানির হিসাব বিভাগের ম্যানেজার মনির হোসেন দায়িত্বশীল লোকদের সাথে সাক্ষাত করারোর বিষয়ে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু পরবর্তীতে কোম্পানির পক্ষ থেকে আর কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
মার্শাল এগ্রোভেট পক্ষ থেকে জানানো হয়, যেকোনো ছত্রাক নাশকের ল্যাবরোটিক্যাল রিপোর্ট হাতে আসতে অনেক দীর্ঘ সময় লাগে। রিপোর্ট হাতে পেলেই আমরা ব্যবস্থা নিব। এতেই শুভঙ্করের ফাঁকিতে পড়েছে কৃষকরা। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা বলছেন, কবে রিপোর্ট আসবে আর কবে তাদের ক্ষতিপূরণ দেবে কোম্পানি। আদো তারা তাদের ক্ষতিপূরণ পাবে কিনা এ ব্যাপারে তারা সন্ধিহান। আর এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে মার্শাল এগ্রোভেট কেমিক্যাল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, এমন ক্ষতিকারক কীটনাশকের ছাড়পত্র কিভাবে দেওয়া হলো সেটা অবশ্যই তদন্তের দাবী রাখে।
উল্লেখ্য, এর আগে মশার লার্ভা নিধনের জৈব কীটনাশক বিটিআই (বাসিলাস থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস) আমদানিতে সিঙ্গাপুরের বেস্ট কেমিক্যালের উল্লেখ করা হলেও এগুলি সিঙ্গাপুরের নয় বলে প্রমাণিত হওয়ায় কালো তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসাবে উল্লেখ করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন।