মোঃ মনিরুজ্জামান চৌধুরী, নড়াইল: নড়াইলের কালিয়া উপজেলার নড়াগাতী এলাকায় বেশকিছুদিন ধরে তীব্র ঠান্ডা অনুভূত হওয়ায়। প্রচণ্ড শীত ও ঘন কুয়াশায় ক্ষতি হচ্ছে শীতকালীন ফসলের।পাশাপাশি রবিশস্যের মধ্যে খেসাড়ী, মশুড়ী, মটর, শাকসবজি, পেঁয়াজ সহ অন্যান্য ফসলে শীতের প্রকোপে বিভিন্ন পোকার আক্রমণ হচ্ছে। এতে কৃষকের মাথায় হাত।এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। সব ধরনের সহযোগিতা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে, এবার শীত ও কুয়াশা কারণে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি, বিশেষ করে আলু, টমেটো, বেগুন ও পেঁয়াজ আবাদে সরাসরি হুমকিতে পড়েছে। আলু ও টমেটোতে বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে কৃষক বিকালের দিকে প্রাকৃতিক কীটনাশক ব্যবহার করতে পারেন। শিমে একধরনের মরিচা রোগ হয়। এমন আবহাওয়ায় এই রোগ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ফলে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
আরও জানা যায়, বোরো ধানের চারার জন্য এমন আবহাওয়া অনেক বড় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে শীতে আক্রান্ত হয়ে চারা অনেক সময় ঝলসে যায়। তাই চারা রাতে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। দিনে পলিথিন সরিয়ে রাখতে হবে। চারায় সব সময় মাটির নিচ থেকে তোলা পানি ব্যবহার করতে হবে। পুকুরের পানি অনেক ঠান্ডা। এতে চারার আরও ক্ষতি হয় ফলে পুকুর থেকে পানি দেওয়া যাবে না। তাছাড়া প্রচণ্ড কুয়াশায় সরিষা পাতা ঝলসে এবং ফুল ঝড়ে যায়। পেঁয়াজের ক্ষেত্রে পাতা পচে যায়। এমনটা হলে কৃষককে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। তাই প্রতিকার হিসাবে এখন থেকেই ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে।
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পাখিমারা গ্রামের কৃষক কার্তিক বাবু জানান, নড়াইলের কালিয়ায় তীব্র শীত চলছে। এ প্রচণ্ড ঠান্ডায় শীতকালীন শাকসবজি ও ফসলে পোকার আক্রমণ বেড়েছে। এছাড়া পান হলদে হয়ে ঝরে যাচ্ছে। শীতে বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় বোরো রোপণে বিলম্ব হচ্ছে। এতে আমাদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। পানের ক্ষতি হলে পুঁজি হারিয়ে পথে বসে যেতে হবে। তাছাড়া বোরো চাষ করার সাহস পাচ্ছি না। যে পরিমাণ শীত পড়ছে, এতে একটু দেরিতে বীজতলা তৈরি করতে হবে। তবে সময়মতো বোরো চাষ না করলে ধানের ক্ষতি হতে পারে। এখন আমরা দোটানার মধ্যে পড়েছি।
কালিয়া উপজেলার গ্রামের কৃষক কায়কোবাদ শিকদার বলেন, কয়েকদিনের প্রচণ্ড শীত ও ঘন কুয়াশায় ক্ষতি হচ্ছে বোরো ধানের বীজতলা। ঝরে পড়ছে সরিষার ফুল। সকাল থেকে কুয়াশায় মোড়ানো থাকছে চারপাশ। এতে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। রাতে ফসলে কুয়াশা পড়ে। ভোরে মাঠে গিয়ে সেসব কুয়াশা সরিয়ে দিতে হয়। আবার অনেক এলাকায় বোরোর বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে কুয়াশা রোধ করতে হচ্ছে। এর জন্য উৎপাদন খরচ বাড়ছে। শীতের এই সময়ে কুয়াশার কারণে বোরো ধানের বীজতলায় লালচে রং হয়ে যায়। আমরা নিজস্ব পদ্ধতি ব্যবহার করে বীজতলা কুয়াশা থেকে ভালো রাখার চেষ্টা করছি। এছাড়াও প্রচণ্ড কুয়াশার কারণে মাঠে সরিষার ফুল ঝরে পড়ছে। এতে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের ভাষ্যমত, প্রচণ্ড ঠান্ডার সঙ্গে কুয়াশা থাকায় রবি ফসলের ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে। শীত ও কুয়াশা চলমান থাকলে শীতকালীন শাকসবজি ও রোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া আগাম জাতের আম গাছে আসা মুকুল ঝরে যেতে পারে। সব মিলে ফসল রক্ষায় এখন থেকেই কার্যকর ভূমিকা নিলে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে চলমান শীত পরিস্থিতি নিয়ে এখনো কোনো ধরনের সুখবর নেই। আরও কয়েকদিন মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি থাকতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে ফসল রক্ষায় চার ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, কুয়াশা ও তীব্র শীতের এ অবস্থায় ফসলের বীজতলায় ৩-৫ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখতে হবে। স্বচ্ছ পলিথিনের ছাউনি দিয়ে বীজতলা দিনরাত ঢেকে রাখতে হবে, তবে খেয়াল করতে হবে চারার পাতা যাতে পলিথিন স্পর্শ না করে। পাশাপাশি ঢেকে রাখা বীজতলায় পানি সকালে বের করে দিয়ে আবার নতুন পানি দিতে হবে, সঙ্গে চারার ওপর জমে থাকা শিশির ঝরিয়ে দিতে হবে। আর প্রতি দশ লিটার পানিতে ৭০-৮০ গ্রাম থিওভিট অথবা কমুলাস ভালোভাবে মিশিয়ে ৪-৫ শতাংশ বীজতলায় স্প্রে করতে হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশে তীব্র শীত ও কুয়াশায় ফসলের যাতে কোনো ধরনের ক্ষতি না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার মাঠ কর্মকর্তারা কৃষকদের সহযোগিতা করছেন। পাতা ঝরে যাওয়া রোধ, সবজি ও ফসলের পোকা আক্রামণ ঠেকাতে কৃষককে নানা রকমের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। শীত-কুয়াশায় বীজতলায় যাতে পানি জমে না থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখা হচ্ছে। রাতে বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে বলা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। তাই ফসল নষ্টের আশঙ্কা নেই।