Monday, March 17, 2025
No menu items!
Google search engine
Homeদেশ"অবৈধ আবাসন প্রকল্প-মার্কেট ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে"

“অবৈধ আবাসন প্রকল্প-মার্কেট ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে”

* সব প্রকল্পের জন্য পৃথক অনুমোদন নিতেই হবে।
* শতাধিক আবাসন / মার্কেট নির্মান প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান।
* ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে / নেওয়া হচ্ছে এমন প্রতিষ্ঠান গুলোর নাম প্রকাশ।
* সাইনবোর্ডসর্বস্ব আবাসন / মার্কেট নির্মান প্রকল্প ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

আবুল বরাকাত:গত বুধবার গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ এর মাধ্যমে বলা হয়, যে সকল প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের অবৈধ প্রতিষ্ঠান খুলে মার্কেট, ফ্ল্যাট এবং আবাসন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে, সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে শত শত কোটি টাকা,বর্তমান সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে।

এমনি নামসর্বস্ব একটি প্রতিষ্ঠান এস,আর,ট্রেডিং নামক প্রতিষ্ঠানের সৈয়দপুর প্লাজা মার্কেট খুজে পায় এ প্রতিবেদক। এই প্রতিবেদক এর সাথে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই মার্কেট এর অসংখ্য দোকান ক্রেতা , ভুক্তভোগীদের সাথে কথা হলে তারা বলেন এস, আর,ট্রেডিং কৃতক নির্মিত সৈয়দপুর প্লাজা মার্কেটে বিগত প্রায় ১০/১৫ বছর পূর্বে এই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী সামসুল হক ভূইয়া হতে দোকান কিনেন কিন্তু এত বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও তারা তাদের স্বপ্নের ক্রয়কৃত দোকানের সাবকবলা দলিল রেজিষ্ট্রেশন বুঝে না পাওয়ার কষ্ট ও বেদনার ক্ষোভ ঝাড়েন |

এ প্রতিবেদকের সাথে সৈয়দপুর প্লাজা মার্কেট কমিটি ও দোকান মালিক সমিতির কথা হলে তারা বলেন এস,আর,ট্রেডিং এর স্বত্বাধিকারী সামসুল হক ভূইয়া সুকৌশলে শুধু মাত্র তিনশত টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে অবৈধভাবে দোকান বিক্রি করে যাচ্ছেন বছরের পর বছর। এ বিষয়ে মার্কেটের স্বত্বাধিকারী সামসুল হক ভূইয়ার সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং পরবর্তীতে উক্ত সৈয়দপুর প্লাজা মার্কেটের ম্যানেজার গুলজার আহম্মেদ এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনিও এবিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
সেখানে সরেজমিনে দেখা যায় প্রায় সব গুলো দোকানই শুধু মাত্র তিনশত টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে পজিশন হস্তান্তর দলিল সম্পাদন করা হয়েছে যা সম্পূর্ণ ভূমি আইনে বেআইনি ও অবৈধ।

এ বিষয়ে এই প্রতিবেদক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বললে,তিনি বলেন বেশির ভাগ বেসরকারি আবাসন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এই অনিয়ম ঠেকাতে সরকারের একাধিক আইন থাকলেও, তার বাস্তব প্রয়োগ নেই, এই সুযোগে প্রতিষ্ঠানগুলো আইন গুলো খুব একটা আমলে নেয় না। এবার আবাসন খাতে প্রতারণাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ঠেকাতে আইন প্রয়োগে শক্ত হচ্ছে সরকার। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ (জাগৃক) ইতিমধ্যে তালিকা করে শতাধিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। সংস্থাটির সঙ্গে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রেখেছে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব মোঃ হামিদুর রহমান খান এ প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যারা জাগৃক ও রাজউক থেকে প্রকল্প অনুমোদন করেনি, তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আইন অনুযায়ী তাদের (আবাসন প্রতিষ্ঠান) অবশ্যই পৃথক প্রকল্পের জন্য অনুমোদন নিতে হবে।

জাগৃক সূত্রে জানা যায়, গত ৩১ ডিসেম্বর জাগৃকের নির্বাহী প্রকৌশলী (মিরপুর গৃহসংস্থান বিভাগ-২) কাওসার মোর্শেদ গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে দেওয়া চিঠিতে আইন মেনে ব্যবসা না করার জন্য ১১টি আবাসন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান। যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো নাভানা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড, পুষ্পধারা প্রোপার্টিজ লিমিটেড, আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ, স্বপ্নধরা অ্যাসেটস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, প্রিয়প্রাঙ্গণ, ঠিকানা প্রোপার্টিজ অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেড, জন্মভূমি সিটি, প্রিমিয়াম হাউজিং এস্টেট লিমিটেড, ধরিত্রী প্রোপার্টিজ লিমিটেড, মডার্ন এশিয়া প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট (প্রাইভেট) লিমিটেড এবং নিমতলা হাউজিং লিমিটেড। একই সংস্থার নির্বাহী প্রকৌশলী (ঢাকা ডিভিশন-১) মোঃ কায়সার ইবনে সাঈখ একই দিনে মন্ত্রণালয়ে পৃথক আরেকটি চিঠি দেন। সেখানে তিনি রূপগঞ্জ এলাকার ভাইয়া হাউজিং লিমিটেড, প্রাইম অ্যাসেট লিমিটেড, সাভারের সুগন্ধা প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট লি., চলন্তিকা হাউজিং, স্বপ্নভূমি আবাসন, মেগা বিল্ডার্স এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাগৃকের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ আবদুল্লাহ নূর বলেন, ‘আবাসন ব্যবসা করতে হলে সংশ্লিষ্ট আইনে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক হলেও বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান তা মানছে না। তাই বাধ্য হয়ে এখন আইনি ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। গত দুই দিনে আমরা বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নোটিশ দেওয়াসহ নানা ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি।’

গত দুই দিনে এ প্রকৌশলীর কাজের আওতাভুক্ত এলাকায় যেসব আবাসিক প্লট, ফ্ল্যাট ও মার্কেট নির্মান সহ ভূমি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে / হয়েছে সেগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়েছে। এর মধ্যে আইন পল্লী, পূর্বাচল প্রাইম সিটি,এস আর ট্রেডিং, সুবর্ণ ভূমি হাউজিং লিমিটেড কে নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। প্রকৌশলী জানান, এসব রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান জাগৃক থেকে কোনো প্রকল্প অনুমোদন করেনি। এগুলোর মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠানকে জাগৃক থেকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে, তাদের নিবন্ধন বাতিলের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ইতিমধ্যেই সুপারিশ করা হয়েছে। নিবন্ধিত ও নিবন্ধনহীন উভয় ধরনের কোম্পানির অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পাশাপাশি ঐ সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় আনার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের কাজ প্রক্রিয়াধীন। সে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে প্রতিষ্ঠানগুলোর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পাশাপাশি ঐ সমস্ত প্রতিষ্ঠান মালিকের বিরুদ্ধে জেল জরিমানা সহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এর কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে।

জাগৃকের কর্মকর্তারা বলেন, সরকার এখন বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা, ২০০৪ (সংশোধিত ২০১২ ও ২০১৫), রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ বাস্তবায়নে জোর দিচ্ছে। এ আইন অনুযায়ী, কোনো ডেভেলপার যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া কোনো রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু করলে কিংবা অননুমোদিত রিয়েল এস্টেট প্রকল্পের বিজ্ঞাপন প্রচার বা বিক্রয় করলে অনূর্ধ্ব দুই বছর কারাদণ্ড অথবা অনূর্ধ্ব ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

এ ছাড়া পরিবেশ রক্ষায় প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ লঙ্ঘনকারী কার্যক্রম বন্ধ করতেও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো একযোগে কাজ শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে শতাধিক বেসরকারি আবাসন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে নানা ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে।

রাজউক সূত্রে জানা যায়, কিছুদিন ধরে তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। কোথাও রাজউক সরাসরি নিজে, আবার কোথাও সরকারি অন্য সংস্থার সহযোগিতায় ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছে। এর মধ্যে ওয়েস্টার্ন সিটি, ঢাকা মডার্ন সিটি লিমিটেড, সাফা মাওয়া গ্রুপ, সবুজছায়া গ্রুপ, অ্যাপোলো হাউজিং লিমিটেড, সাউথ টাউন, বিডিসি লিমিটেড, আটি মডেল টাউন, জেনোভ্যালী মডেল টাউন প্রাইভেট লি., মধু সিটি, আরশিনগর ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি, নতুনধারা হাউজিং কোম্পানি লিমিটেড, আইকাব হাউজিং কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেড, হীরাঝিল প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট (প্রাইভেট) কোম্পানি লিমিটেড, সবুজছায়া আবাসন প্রজেক্ট লিমিটেড, গ্লোরিয়াস ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লি:, গ্রিন সিটি লিমিটেডকে নোটিশ দেওয়া হলেও বেশির ভাগই তা আমলে নেয়নি। যারা এখনো নিয়ম মেনে ব্যবসা চালাচ্ছে না, তাদের বিরুদ্ধে আরও শক্ত পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে রাজউক ও জাগৃক।

রাজউকের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সিদ্দিকুর রহমান সরকার এ বিষয়ে বলেন,গত বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজউক তুরাগ নদের পশ্চিম পাশে উত্তর কাউন্দিয়া ও বেড়িবাঁধের রাস্তায় অবৈধ আবাসন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে। অনেকেই চিহ্নিত জলাশয় ও কৃষিজমি ভরাট করে আবাসন ব্যবসা করে যাচ্ছে। সেগুলো আর আমরা করতে দেব না। এ ছাড়া অনুমোদনহীন সব আবাসন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’এর প্রেক্ষিতে সরকার সকল ধরণের অবৈধ হাউসিং ও ডেভেলপার কোম্পানিদের লিস্ট ধরে ধরে আইনের আওতায় আনার জন্য নির্দিষ্ট কতৃপক্ষ কে নির্দেশ দিয়েছেন |

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments