উথোয়াইচিং মারমা,বান্দরবান:পার্বত্য বান্দরবানে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী ‘মাহা ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে: বা প্রবারণা উৎসব এ বছর সীমিত আকারে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উৎসব উদযাপন পরিষদ।
প্রতিবছর এ উৎসব ঘিরে চার দিনব্যাপী জাঁকজমকপূর্ণ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা পালন করে আসলেও এবার পাহাড়ে ‘সাম্প্রতিক পরিস্থিতির’ কারনে দু’দিন ব্যাপী সীমিত পরিসরে উৎসব পালন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
১৭ ও ১৮ অক্টোবর দু’দিনের উৎসবে অনুষ্ঠানসূচি থেকে বাদ গেছে বিশেষ করে ঐতিবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পিঠা তৈরি উৎসব। কেবল ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার জন্য গৌতম বুদ্ধকে স্মরণ করে আকাশে ফানুস উড়ানো হবে।
বুদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা জানান, আদিকাল থেকে তিন মাস ব্যাপী বর্ষাবাস (উপোস) থাকার পর পাহাড়ী মারমা সম্প্রদায়ের লোকজন ধর্মীয় ভাবগম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে (প্রবারণা পূর্ণিমা) উৎসব পালন করে আসছে। কথিত আছে, বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধ এই আশ্বিনী পূর্ণিমায় তার মাথার চুল আকাশে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাই আশ্বিনী পূর্ণিমার এই তিথিতে বৌদ্ধধর্মলম্বীরা আকাশে ওড়ানো হয় শত শত ফানুস বাতি। নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী ফানুস বাতি বানিয়ে আকাশে উড়িয়ে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধকে স্মরণ বা উৎসর্গ করেন ভক্তরা। মারমা সম্প্রদায় এই উৎসবকে ‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে’ বা প্রবারণা পূর্ণিমা হিসেবে পালন করে থাকেন।
এদিকে বুদ্ধ বিহারে বিহারে চলছে ফাসুন তৈরি কাজ। আর মঙ্গল রথযাত্রা প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন রথ শিল্পীরা।
তবে পাহাড়ের অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজমান কারণে ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসবে এবার আমেজ নেই। চলতি মাসে ১৭ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া দুই দিনের এই উৎসবকে ঘিরে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের বাইরে যেমন সরারাত ধরে চলা অলিগলিতে পিঠা তৈরি উৎসব। এসময় নাচ গান ও ওইহুল্লা মেঠে ওঠেন সর্বস্তরের মানুষজন।
তাছাড়া বান্দরবানে এ উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে মঙ্গলশোভা রথযাত্রা। রথের ওপর বুদ্ধ মূর্তি স্থাপন করে রথটি টেনে পুরো শহর ঘুরিয়ে সাঙ্গু নদীতে বিসর্জন দেয়া হয়।
এ সময় নানা রকম নৈবেদ্য ও মোমবাতি জ্বালিয়ে বুদ্ধ মূর্তি দর্শন করেন পূজারীরা। ওই সময় রথের পেছনে সর্বস্তরের মানুষ মারমাদের ঐহিত্যবাহী গান গেয়ে ঢোল বাজিয়ে এতে যোগ দেন। এবার জনসমাগম হয় এমন অনুষ্ঠান বাতিল করা সিধান্ত হয়েছে। ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছাড়া সামাজিক অনুষ্ঠানকে এবার অনেকটাই বাতিল করেছেন আয়োজকেরা।
উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি অংচমং মারমা জানান, আসন্ন প্রবারণা পূর্ণীমা উপলক্ষে উৎসব উদযাপন পরিষদ বান্দরবান সদর বিগত বছরের মতো কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। প্রথমদিন ১৭ তারিখ বিকাল ৫ টায় পুরাতন রাজবাড়িতে অরহৎ উপগুপ্তকে উদ্দেশ্যে করে নির্মিত রথ প্রথমে ঐতিহ্যবাহী রাজগুরু বৌদ্ধ বিহারে অবস্থানরত আসাংম্রাইকে (গৌতম বুদ্ধকে স্মরণ করে) বন্দনা করার উদ্দেশ্যে গমন। সেখানে বন্দনা শেষে উজনিী পাড়া বৌদ্ধ বিহারে অবস্থানরত পদমুং আসাংকে (গৌতম বুদ্ধকে স্মরণ করে) বন্দনা করার উদ্দেশ্যে গমন। পুনরায় পুরাতন রাজবাড়িতে ফেরৎ নিয়ে আসা হবে। পরেদিন বিকাল ৪টায় পুরাতন রাজবাড়ি হতে রথে উপবিষ্ট উপগুপ্ত অরহৎকে বান্দরবান শহরে বসবাসরত এবং দুরদুরান্ত থেকে আগত পূণ্যার্থীদের বন্দনার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করা হবে। শহর প্রদক্ষিণ এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বন্দনা শেষে উজানী পাড়ার খেয়া ঘাটে নিয়ে সাঙ্গু নদীতে ভাসিয়ে বিসর্জন করা হবে।
বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার মো: শহীদুল্লাহ কাওছার বলেন, বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসবকে ঘিরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। মহিলা টিম ও সাদা পোশাকে টহলে থাকবে। কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন।