যোবায়ের হোসাইন :উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানা হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগস্টিক সেন্টারকে কেন্দ্র করে বেড়েই চলছে ভূয়া ওষুধের রমরমা ব্যবসা ও এর সাথে জড়িত চক্রের পরিধি।
ভূয়া ওষুধের প্বার্শ প্রতিক্রিয়ায় স্বাস্থ ঝুকিতে পড়ছে শত শত মানুষ, অর্থহানী হচ্ছে হাজারো পরিবারের।
দৈনন্দিন বাড়ছে অভিযোগ ও ভূক্তভোগীদের সংখ্যা, জরিমানা দিতে হচ্ছে ফার্মেসী মালিকদের।
আঙ্গুল ফুলে বটগাছ হচ্ছে ডাক্তার ও এর সাথে জড়িত হোতাকর্তারা।
ভূয়া ওষুধ ক্রয়- বিক্রয়ে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নিয়ে প্রতিবেদক যোবায়ের হোসাইন এর ধারাবাহিক ১১টি পর্বের ১ম পর্ব এটি।
তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, উত্তরাতে ৪টি হাসপাতাল, ২ টি ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের ফার্মেসী এবং এর আশপাশের ফার্মেসী ও কয়েকটি নামকরা ফার্মেসী ভূয়া ওষুধ ব্যবসার মূল কেন্দ্রবিন্দু।
হাসপাতালগুলোর মধ্যে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, লুবানা হাসপাতাল, ক্রিসেন্ট হাসপাতাল ও ডায়াগনিস্টিক সেন্টার অন্যতম। ডায়াগনিস্টিক সেন্টারগুলোর মধ্যে ল্যাব এ্যাইড ও পপুলার এবং ফার্মেসীর মধ্যে ফৈরদৌসী ও লাজ ফার্মা।
তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, উত্তরা আধুনিক মেডিকেলের ভেতর ও বাহিরে ভূয়া ওষুধ ক্রয়- বিক্রয়, মার্কেটিং ও ব্যবস্থাপনায় রয়েছে শতাধিক চক্র।
তাদেরকে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মেডিকেলের পশ্চিম পাশে ফার্মেসী গলি হিসেবে পরিচিত ১ নং রোডে অবস্থান করতে দেখা যায়। তারা ফুড সাবলিম্যান্ট হিসেবে পরিচিত বিদেশী মাল্টিভিটামিন, শিশুদের ভিটামিন, বয়স্কদের ক্যালসিয়াম ভিটামিন, চর্ম রোগের ওষুধ, সাবান ও প্রসাধনী, যৌন উত্তেজনা বাড়ানোর ক্যাপসুল এবং জটিল সমস্যা সমাধানের ওষুধ ফার্মেসীগুলোতে সাপ্লাই দিয়ে থাকেন। তাদের সরবরাহ করা এসব ওষুধ ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে বিক্রি হয় বলে জানান ফার্মেসী দোকান মালিকরা।
সরেজমিন অনুসন্ধানে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজের ভেতরে অবস্থিত কাকরাইল ফার্মেসীতে গেলে দেখা মিলে এক ভয়াবহ দৃশ্যের। আসিফ নামের এক গ্রাহকের কাছে ১৫ টাকার ওষুধ ৭০ টাকায় বিক্রি করেন করা হয়।
এনিয়ে গ্রাহকের সাথে চলছে তর্ক বিতর্ক। ওষুধের বাজার মূল্য নিয়ে প্রশ্ন করলে এবং ওষুধের প্যাকেট দেখতে চাইলে দেখা যায়, কাকরাইল ফার্মেসীর ৯৯ ভাগ ওষুধের প্যাকেটের ভেতর কোন ওষুধ নেই। প্রদর্শনী প্যাকেট হিসেবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
এমনকি ফার্মেসীটির ভেতরে বিদ্যুৎ পর্যন্ত ছিলো না। মেডিকেলটিতে ভর্তি জটিল রোগীদের সার্জারির জন্য ব্যবহৃত ওষুধ এখান থেকেই বিক্রি হচ্ছে, যা হালকা ঠান্ডায় সংরক্ষন বাধ্যতা মূলক।
ফার্মেসীতে বিদ্যুৎ না থাকা, হালকা ঠান্ডায় সংরক্ষন বাধ্যতা মূলক সার্জারি ওষুধ বিক্রি ও খালি প্যাকেট সাজিয়ে রাখার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা প্রতিবেদককে জানান, ফার্মেসীর মালিকরা ওষুধ কোম্পানীর কোটি টাকা আত্মসাত করে আত্মগোপনে আছেন, তাই তাদেরকে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না।
তারা আরো জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও তাদের কাছে ভাড়া বাবদ ৩ কোটি টাকা পাবেন। ওষুধ ছাড়া ফার্মেসী কেন খোলা রাখা হয়েছে প্রশ্ন করলে প্রতিবেদককে এক কর্মচারি গোপনে জানান, আমারা ফার্মেসীর দখল ঠিক রাখার জন্য বসে আছি। নতুন টেন্ডার হবে, সেটি আমরা ‘নবরুপা’ নামে পাবো।
ফুড সাপলিম্যান্ট নামে ভূয়া মাল্টিভিটামনি, শিশুদের ভিটামিন, বস্ককদের ক্যালসিয়াম ভিটামিন, চর্ম রোগের ওষুধ- সাবান, যৌন উত্তেজনা বাড়ানোর ক্যাপসুল এবং জটিল সমস্যা সমাধানের ট্যাবলেট হাসপাতালের ভেতর কেন বিক্রি করা হয় প্রশ্ন করলে কর্মচারিরা বলেন, এটি মালিক বা ম্যানাজারের বিষয়, আমরা জানিনা।
ফার্মেসীর সার্বিক বিষয় নিয়ে ম্যানাজার লিমন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, ফুড সাবলিম্যান্ট ও ভূয়া কোম্পানীর ওষুধ রাখতে আমরা বাধ্য হই, আমরাও এক ধরনের ভ‚ক্তভোগী।
তিনি আরো বলেন, ডাক্তার রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে ঐসব ওষুধ লেখেন, তাই আমরা রাখতে ও বিক্রি করতে বাধ্য হই। ফার্মেসী সম্পর্কে তিনি বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে আমাদের ৩টি মামলা চলছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কারনেই ফার্মেসীর এই পরিস্থিতি। ফার্মেসীর মালিক মনির এর সাথে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এবিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্যের জন্য ৭ম তলায় অবস্থিত প্রশাসনিক কার্যালয়ে গেলে নিরাপত্তাপ্রহরি জানান, ভেতরে প্রবেশের জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। নিরাপত্তা প্রহরি অনুমতির জন্য ভেতরে গেলে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কক্ষ থেকে ঐ দিন যে অনুপস্থিত তার উপর দায়ভার চাপিয়ে পরের দিন আসতে বলেন। এভাবে প্রতিবেদককে ৩ দিন ঘুরানো হয়, কিন্তু কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উত্তরা আধুনিক মেডিকেল ও এর আশপাশের বিভিন্ন ফার্মেসী ঘুরে দেখা যায়, ‘আরবিএম’ কর্পোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান ‘ওভা মিল ও প্রলিফিক’ নামে মহিলাদের বন্ধ্যাত্ব দূর করার ২ ধরনের ট্যাবলেট ফার্মেসীতে সরবরাহ করছেন। সরবরাহকারির সাথে কথা হলে তিনি ট্যাবল্যাট ২টির কোন বৈধতা ও অনুমোদিত কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। ‘এফআর’ ফার্মা কেয়ার নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের অবস্থা একই রকম। চলবে,