লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের পাটগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা এম ওয়াজেদ আলীর হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে সোমবার (৩০ জানুয়ারি) সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাক দিয়েছে ব্যবসায়ী সমিতি। এ কর্মসূচি ঘোষণার পর পরই এ মামলার প্রধান অভিযুক্ত নাহিদুজ্জামান প্রধান বাবুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
রোববার (২৯ জানুয়ারি) রাত ১২টায় পাটগ্রাম থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুকে এ কথা নিশ্চত করেন।
শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) রাতে পাটগ্রাম পৌরসভার নিউ পূর্বপাড়ায় নিজ বাসার গেটের সামনে দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হন পাটগ্রাম মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা এম ওয়াজেদ আলী। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে বিচার দাবিতে উত্তাল পুরো পাটগ্রাম উপজেলা। হত্যাকারী ও তাদের মদদদাতদের গ্রেফতারের দাবিতে প্রতিদিন বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ ও স্মারকলিপিসহ নানান কর্মসূচি পালন করছে পাটগ্রাম নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধাসহ সব সামাজিক সংগঠন। সর্বশেষ রোববার (২৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় হরতালের ডাক দিয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে ব্যবসায়ী সমিতি। সোমবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হরতাল সফল করতে মাইকিং করছে সব সংগঠন। এ হরতালে ওষুধ খাবারসহ সব ধরনের দোকান বন্ধ রাখার কথাও বলা হচ্ছে।
পাটগ্রাম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ছায়েদুজ্জামান সায়েদ বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা এম ওয়াজেদ আলীর হত্যাকারী ও মদদদাতাদের গ্রেফতার দাবিতে নানান কর্মসূচি পালন করেছি। তবুও অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তাই আজ সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করা হবে। এতে সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে হরতাল সফল করতে আহ্বান জানান তিনি।
নিহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এম ওয়াজেদ আলী। তিনি পাটগ্রাম মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এবং লালমনিরহাট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবেদ আলীর ছোট ভাই। তিনি জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক উপ কমান্ডার ছিলেন।
মামলার এজাহার, পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, পাটগ্রাম মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠা অধ্যক্ষ হিসেবে অবসর গ্রহণের পর এলাকায় ফাতেমা প্রি ক্যাডেট কিন্ডার গার্টেন স্কুল নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এম ওয়াজেদ আলী। এ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সেই প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক নাহিদুজ্জামান প্রধান বাবুকে গুরুতর অপরাধে সহকারী শিক্ষক পদ থেকে চাকরিচ্যুত করেন অধ্যক্ষ এম ওয়াজেদ আলী। যা নিয়ে বেশ বিতর্ক ও সমালোচনার জন্ম দেয়। এতে এম ওয়াজেদ আলীর বিরুদ্ধে ক্ষেপে যান নাহিদুজ্জামান প্রধান বাবু।
এরই জের ধরে শুক্রবার রাতে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের নিয়ে এম ওয়াজেদ আলীর বাসার সামনে গোপনে অবস্থান নেন নাহিদুজ্জামান প্রধান। রাত ১০টার দিকে শহরের কাজ শেষে বাসার সামনে পৌঁছলে নাহিদুজ্জামান প্রধানসহ বাকী অভিযুক্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে এম ওয়াজেদ আলীকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। তার চিৎকারে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পাটগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ঘটনা অনুসন্ধানে মাঠে নামে পুলিশ। শনিবার (২১ জানুয়ারি) পাটগ্রাম টিএন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নামাজে জানাজা শেষে জগতবেড় ইউনিয়নে নিহতের গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যদায় দাফন করা হয়।
ঘটনার একদিন পর শনিবার দিনগত মধ্যরাতে নাহিদুজ্জামান প্রধানের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয়দের বিরুদ্ধে পাটগ্রাম থানায় একটি হত্যা মামলা (নং-১৪; তারিখ ২২-০১-২০২৩) দায়ের করেন নিহতের ছেলে রিফাত হাসান।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার সকালে আলোচিত এ মামলার প্রধান অভিযুক্ত নাহিদুজ্জামান প্রধান বাবুর ঘনিষ্ট বন্ধু আলমগীর হোসেন আব্দুল্লাহকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
রোববার রাত ১২টায় পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক বলেন, প্রধান অভিযুক্ত নাহিদুজ্জামান প্রধান বাবুকে একটু আগে পাটগ্রাম থেকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠন হরতালের ঘোষণা দিয়েছেন বলেও শুনেছি।